সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৪৩ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
ফ্যাসিস্ট আ.লীগের নেতা মোঃ কামরুল ইসলাম নান্টুর রাজধানী ঢাকায় আবাসিক হোটেলের নামে অবৈধ পতিতা, মাদক ও অস্ত্রের রমরমা ব্যবসা। কালের খবর শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় ইসলামী শ্রমনীতি চালু করতে হবে : আ ন ম শামসুল ইসলাম। কালের খবর মাটিরাঙ্গায় শীতবস্ত্র বিতরণ করেছে পৌর বিএনপি। কালের খবর অন্তর্বর্তী সরকারের উদারতা কপালপোড়া জাতিকে অনন্তকাল ভোগাবে : হাসনাত। কালের খবর মাটিরাঙ্গা বাজার ব্যবসায়ী পরিচালনা কমিটির নেতৃত্বে জামাল-মুকুট। কালের খবর তিল ধারণের ঠাঁই নেই কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। কালের খবর আমতলীতে ভূমি দস্যুর অত্যাচারের প্রতিবাদে মানববন্ধন। কালের খবর নবীগঞ্জ প্রেস ক্লাব নির্বাচন সম্পন্ন : সালাম সভাপতি, ছনি সম্পাদক নির্বাচিত। কালের খবর সীতাকুণ্ডে জামায়াত নেতার ওপর হামলা, প্রতিবাদে মিছিল সমাবেশ। কালের খবর আমাকে ও আমার মেয়েদের কুপ্রস্তাব দেয় রাজ্জাক। কালের খবর
পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি জরুরি। কালের খবর

পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি জরুরি। কালের খবর

 

।। মোঃ সহিদুল ইসলাম সুমন, কালের খবর ।। 

২রা ডিসেম্বর ২০২৪ পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি র ২৭ তম বছর পূর্ণ হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে ১৯৯৭ সালের পূর্বের বিরাজমান অস্থিতিশীল পরিবেশ নিরসনের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জে এস এস) এর মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তিটি চার খন্ডে বিভক্ত, ক খন্ডে ৪ টি, খ খন্ডে ৩৫ টি, গ খন্ডে ১৪ টি এবং ঘ খন্ডে ১৯ টি ধারা সহ সর্বোমোট ৭২ টি ধারা রয়েছে। ৭২ টি ধারার মধ্যে বিভিন্ন সরকার এ পর্যন্ত ৬৫ টি ধারা বাস্তবায়ন করেছে। সরকারের বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায় শান্তি চুক্তির ৪৮টি ধারা সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত, ১৫ টি ধারা আংশিক বাস্তবায়িত এবং ৯ টি ধারার বাস্তবায়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে জানা যায়-এর মধ্যে ক খণ্ডের ১,২,৩,৪ ধারা বাস্তবায়িত; খ খণ্ডের ১, ২, ৩, ৫, ৬, ৭, ৮, ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮, ২০, ২১, ২২, ২৩, ২৫, ২৮, ৩০, ৩১, ৩২, ও ৩৩, গ খণ্ডের ১, ৭, ৮, ৯, ১০, ১২, ১৪ বাস্তবায়িত এবং ঘ খণ্ডের ১, ৫, ৮, ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ও ১৯ ধারা মোট ৪৮ টি সম্পুন্ন বাস্তবায়িত; খ খন্ডের ৪ (ঘ), ৯,১৯,২৮,২৭,৩৪, গ খন্ডের ২,৩,৪৫৬,ঘ খন্ডের ৪,৬,১৭,১৮ ন্ম্বর মোট ১৫ টি ধারা আংশিক বাস্তবায়িত হয়েছে; এবং খ খন্ডের ২৬,২৯,৩৫, গ খন্ডের১১,১৩,ঘ খন্ডের ২,৩,৭,৯, ধারা মোট ৯ টি ধারা বাস্তবায়ন কার্যক্রম চলমান। এই চুক্তির উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ১৫-০৭-১৯৯৮ ইং তারিখে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সৃষ্টি ।
পার্বত্য শান্তি চুক্তির অধিকাংশ ধারা বাস্তবায়িত হলেও বেশ কিছু বিষয় এখন ও অমীমাংসিত রয়ে গেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো ভুমি বিরোধ নিষ্পত্তি। এই বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য শান্তি চুক্তি হবার দুই বছর পরে ‘ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন’ গঠন করা হয়েছিল। এই কমিশনের কাছে এখন প্রায় ১৬ হাজারের মতো আবেদন জমা পড়ে আছে। গত ২৫ বছরে এই কমিশন কোন কাজই করতে পারেনি। এবং ২০১৬ সালের পর থেকে এই কমিশন আর কোন আবেদনও গ্রহণ করেনি। খাগড়াছড়ি শহরে এই কমিশনের অফিস, বাস্তবে সেখানে কোন কর্ম তৎপরতা নেই।
গত ২০২৪ এর ৫ আগস্ট বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতার পর বর্তমান অর্ন্তবতী সরকার পতিত স্বৈরাচার সরকারের অনেক কর্মকান্ড ও চুক্তি সংস্কারের জন্য বিভিন্ন কমিশন গঠন করেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালি ও ক্ষুদ্র নিয়ে গোষ্ঠীর অনেক সম্প্রদায় এই চুক্তির সংশোধন দাবি করে আসছে কারণ বর্তমান যে কমিশন কাজ করছে তাতে আনুপাতিক হারে সকল সম্প্রদায় প্রতিনিধিত্ব নে্ই। এবং এই চুক্তির পরর্বতীতে পাহাড়ে ভাতৃ-ঘাতী সংগাত অনেক বেড়ে গেছে। বেড়েছে খুন, চাঁদাবাজি ,অপহরণ, গুম সহ নানান অস্থীতিশীলতা। এই প্রসঙ্গে খাগড়াছড়ির সাবেক এমপি, বিএনপি নেতা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান জনাব ওয়াদুদ ভূঁইয়া সম্প্রতি বিবিসিতে দেওয়া এক স্বাক্ষাতকারে বলেছেন, “এই ভুমিকমিশনে বাঙালিদের কোন প্রতিনিধিত্ব নেই। একমাত্র বাঙালি হচ্ছেন চেয়ারম্যান। বাকি সবাই উপজাতি। তাহলে বাঙালিরা কিভাবে ন্যায়বিচার পাবে?”
তাছাড়া চুক্তির পরবর্তীতে আওয়ামী শাসন আমলে পাহাড়ে ৬ টি সশস্র গ্রুপের জন্ম হয়েছে, যাদের খুন, চাঁদাবাজি ,অপহরণ, গুম সহ নানা অপকর্মে পাহাড়ের সাধারণ মানুষ এখন অতিষ্ট। এবং এখানে উল্লেখ্য যে ২০১৬ সাল পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জে এস এস) এর সাথে সরকার এই চুক্তি সম্পন্ন করেছে সেই পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জে এস এস) বিভিন্ন অজুহাতে এই পার্বত্য ভুমি কমিশন কে কোন ধরনের কাজ করতে দেয়নি, যার ফলশ্রুতিতে যে কয়টি ভূমি কমিশন গঠিত হয়েছে তার সব কটাই ব্যর্থ হয়েছে। ২০১৬ সালে পতিত স্বৈরাচার জে এস এস দাবীর মুখে ৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিশনের একমাত্র বাংগালী সদস্য চেয়াম্যানের ক্ষমতাকে খর্ব করে আইনটি সংশোধন করেছে, বর্তমান আইনে বাংগালিদের ভূমিতে তেমন কোন অধিকার নেই বললে ই চলে। এই কমিশনকে কার্যকর করতে হলে সবার আগে আইন সংশোধন করে, পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি জরিপের মাধ্যমে ভুমির সঠিক মালিকানা নির্নয় করতে হবে,এবং তার পর ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির দিকে আগাতে হবে, ভুমি জরিপের মাধ্যমে বিরোধ পূর্ণ ভূমি অবস্থান নির্ধারিত হলে ই তার সামাধান সম্ভব। অন্যথায় এ সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়।
পার্বত্য চট্টগ্রামে সামরিক বেসামরিক প্রশাসন যেভাবে নিরলস ভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য কাজ করে যাচ্ছে,তার প্রকৃত সুফল তখনই ঘরে আনা সম্ভব যখন পাহাড়ের সকল সম্প্রদায় আন্তরিক হবে। এবং ভূমি সহ অমীমাংসিত যে সকল বিষয় এখনো মীমাংসার অপেক্ষায় আছে সে সকল ধারা উপ ধারা সকল সসম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের অংশ গ্রহনের মাধ্যমে এর সমাধানের পথ খুজে বের করবেন । সবচেয়ে বড় কথা শান্তির জন্য প্রয়োজন পারস্পরিক আস্থা ,বিশ্বাস ও শ্রদ্বাবোধ। তাহলে ই ১৯৯৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচনের পর বর্ণবৈষম্য-উত্তর দেশে শান্তির জন্য আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটু যে রেইনবো নেশন গঠন করেছিলে্ন , তেমনি পাহাড়ের সকল ধর্ম ও মতাদর্শের মানুষদের নিয়ে একটি ‘রেইনবো জাতি’ গড়ে তুলা সম্ভব।ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার, নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার সবার। এই মুল মন্ত্র আমাদের কেঐক্যবদ্ধ করেতে পারে। পারে পাহাড়ে শান্তির শ্বেত পাতাকা উড়াতে।
লেখক : সদস্য, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ, কলামিস্ট ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক।
Email : msislam.sumon@gmail.com

দৈনিক কালের খবর নিয়মিত পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিন..

কালের খবর মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com